জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Saturday, 24 February 2018

নিমাই পণ্ডিত এবং নবদ্বীপবাসী পর্ব-(০১)
 
নিমাই পণ্ডিত ছাত্রদের নিয়ে নবদ্বীপ শহর ঘুরে বেড়াতেন। তিনি ছিলেন সেই পণ্ডিত নগরীর নেতৃস্থানীয়। অধিকাংশ মানুষ জানত না যে, তিনি পুরুষোত্তম, কিন্তু যেভাবেই হোক প্রত্যেকেই তাঁর প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ অনুভব করত। তারা বলত, “ দেখ, এই বালকটি অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন এক তরুণ পণ্ডিত।

 মহাপ্রভু অধ্যাপনা শেষ করে গঙ্গায় গিয়ে সাঁতার কাটতেন। স্নান শেষে শচীমাতার হাতে রান্না করা পরম সুস্বাদু প্রসাদ গ্রহণ করতেন। তিনি অন্নের সাথে শুকতা, তেতো শাক, নানা প্রকার সবজি, বিভিন্ন ধরনের চর্চ্চড়ি ইত্যাদি ভালোবাসতেন। শচীমাতা শ্রীচৈতন্যদেবকে প্রসাদ গ্রহণ করতে দেখে খুবই আনন্দিত হতেন।
মহাপ্রভুর নবদ্বীপ শহরে তাঁর ছাত্রদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন আর শাস্ত্র আলোচনায় সব পণ্ডিতকে পরাস্থ করতেন। কিন্তু তাঁর বিনীত ব্যবহারের জন্য কেউই দুঃখ পেত না। শ্রীচৈতন্যদেব ধীরে ধীরে তাঁর শত শত ছাত্রকে শিক্ষা দিতেন। তাঁর বয়স  ছিল মাত্র বার তের বছর, কিন্তু তাঁকে দেখে প্রাপ্ত বয়স্ক মনে হতো-তাঁর উচ্চতা ছিল সাত ফুট। তাঁকে বলা হয় আজানুভুজ, কারণ তিনি  দাঁড়ালে তাঁর হাত দুটো জানু (হাঁটু) স্পর্শ করে। তিনি অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। ছিলেন সকল গুণের আধার।
শ্রীচৈতন্যদেব এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে, বিভিন্ন গল্পের দ্বারা তিনি সকল শাস্ত্র ও সংস্কৃত ব্যাকরণ ব্যাখ্যা করতেন। এভাবে শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ছয় ঘণ্টা আলোচনা করতেন এবং তাদের নিয়ে নগরে  হাঁটতে বের হতেন। তাদের অনেকেই মহাপ্রভুর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন, কিন্তু মহাপ্রভু ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং সেই দলের দলনেতা।

নগরে হাঁটতে হাঁটতে কোন পণ্ডিতের দেখা পেলে শ্রীচৈতন্যদেব সাথে সাথে বলতেন “ হে ব্রাহ্মণ, হে পণ্ডিতবর, আপনি ভালো আছেন তো? আপনার কাছ থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিন।” তারপর তিনি এমন জটিল প্রশ্ন করতেন যে, সেই ব্যক্তি উত্তর দিতে পারত না। আবার যদি কেউ উত্তর দিত, শ্রীচৈতন্যদেব তাকে বলতেন,“ বাহ্, আপনার উত্তর খুব সুন্দর। এর অনেক ভালো দিক রয়েছে; আবার অনেক ত্রুটিও রয়েছে।” তারপর তিনি ভালো এবং ত্রুটিপূর্ণ সবদিক তুলে ধরতেন আর সেই ব্যক্তি নিজের ত্রুটিগুলো দেখতে পেতেন। তখন মহাপ্রভু অন্যভাবে বিশ্লেষণ করতেন এবং ত্রুটিগুলোকে গুণ হিসেবে দেখাতেন। এভাবে সকলেই শ্রীচৈতন্যদেবের কাছে পরাজয় স্বীকার করতেন। কিন্তু ঐ সময় তিনি তাঁর ছাত্রদের বিশেষভাবে সংস্কৃত ব্যাকরণ শিক্ষা দিতেন।

শ্রীকৃষ্ণ একজন গোপবালকরূপে লীলা বিলাস করেছিলেন; কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেব লীলা করেছেন একজন ব্রাহ্মণরূপে, যার মধ্যে ছিল শিক্ষা, পূজা, শুচিতা ও সংস্কৃতি। বৃন্দাবন লীলায় ছিল গরু-বাছুর, বন-জঙ্গল সব রাখাল বালককে নিয়ে বনভোজন। ভগবান রামচন্দ্র একজন ক্ষত্রিয়রূপে যেমন অসংখ্য দৈত্য-দানব বধ করে লীলা প্রদর্শন করেছেন, তেমনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরূপে লীলা করেছেন। এভাবে তিনি তরুণ ছাত্রদের মন জয় করেছেন। তিনি বিতর্কে ন্যায়সূত্রের প্রয়োগের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি যেকোন ব্যক্তির যুক্তিখন্ডন করতে পারতেন, তারপর অন্য এক পন্থায় সেটিকে সত্য প্রমাণ করে আবার  তাকে ভুল প্রমানিত করতেন। এমনই ছিল তাঁর দক্ষতা। তাই তরুণদের মধ্যে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাস্তবিক পক্ষে বলতে গেলে, শ্রীচৈতন্যদেবের আন্দোলন শুরু হয় যুবকদের মধ্যে।

একদিন মহাপ্রভুর সঙ্গে মুকুন্দের দেখা হয়। মুকুন্দ শ্রীচৈতন্যদেবকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু মহাপ্রভু তাঁকে ডাকতে লাগলেন,“ মুকুন্দ, মুকুন্দ, তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?” তিনি ধরা পড়ে গেলেন। ভাবলেন,“ এখন আমি নিমাই পণ্ডিতকে শিক্ষা দিব, সে শুধু একজন ব্যাকরণবিদ, সংস্কৃত কাব্যের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সে জানে না। সে চায় সবাই তাঁকে অনুসরণ করুক, কিন্তু আজ আমি তার
পাণ্ডিত্য বের করব।” তিনি তখন বললেন,“ আমি কেন তোমার অনুসারী হব? তুমি শুধু ব্যাকরণ জানো। কিন্তু সংস্কৃত কাব্য সম্পর্কে তুমি কী জান?” তখন শ্রীচৈতন্যদেব বললেন,“ ঠিক আছে, তুমি তাহলে কিছু কাব্য রচনা কর, তারপর দেখা যাবে আমি কিছু জানি কি না।”

তখন মুকুন্দ একটি শ্লোক রচনা করলেন আর শ্রীচৈতন্যদেব  এই শ্লোকের দোষত্রুটি সমক্যরূপে ব্যাখ্যা করলেন।  তারপর শ্রীচৈতন্যদেব সাথে সাথে আরো কিছু কবিতা রচনা করে বলতে লাগলেন। তাঁর ছাত্ররা হাসতে লাগলে মুকুন্দ লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। শ্রীচৈতন্যদেব বললেন,“ তুমি শুধু একটি বিষয় নিয়ে ভাবছ কেন? আমরা আগামীকাল আরো কয়েকটি  কাব্য নিয়ে আলোচনা করতে পারি।” তখন মুকুন্দ ভাবতে লাগলেন,“ যদি সে একজন শুদ্ধ ভক্ত হতো, যদি সে তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ পেশায় খুব বেশি জড়িত না থাকত, তাহলে আমি তার সাথে সব সময় থাকতাম।”

        ''গৌরাঙ্গ"
শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ

No comments:

Post a Comment