জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Monday, 29 August 2016

রাজা ইন্দ্রদু্্যম্ন এবং শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের শুভাবির্ভাব

সত্যযুগে, মহারাজ ইন্দ্রদু্্যম্ন মালব নামে একটি প্রদেশ শাসন করতেন। রাজধানী ছিল অবন্তী। সরাসরি ব্রহ্মা থেকে আগত বংশ পরম্পরায় ইন্দ্রদু্্যম্ন পঁচিশতম পুত্র। তিনি ভগবআন শ্রীবিষ্ণুর একজন মহান ভক্ত ছিলেন, সেজন্য সমস্ত সদ্গুণাবলী তাঁর মধ্যে বিকশিত হয়েছিল।
একবার তাঁর দৈনন্দিন পূজা সমাপন করে মহারাজ ইন্দ্র পূজারীকে অনুরোধ করলেন  “হে পুরোহিত! অনুগ্রহ করে এই ধরণীতে সেই মহাতীর্থের সন্ধান করুন, যেখানে আমি পরমব্রহ্মাকে মুখোমুখি দর্শন করতে পারি।” রাজার আদেশ অনুশারে পুরোহিত সমাগত তীর্থযাত্রীকে রাজপ্রাসাদে সমবেত হতে বললেন। করজোড়ে পুরোহিত সমাগত তীর্থযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে তীর্থযাত্রীগণ আপনারা কি এমন কোনো তীর্থ স্থানের কথা অবগত আছন, যেখানে আমাদের মহারাজ স্বচক্ষে ভগবানকে দর্শন করতে পারেন?”

একজন তীর্থযাত্রী সাগ্রহে উত্তর দিলেন, “পরমেশ্বর ভগবানের কৃপায় আমি এই গ্রহে প্রকটিত প্রত্যেক তীর্থ পরিদর্শন করেছি। আপনার প্রিয় রাজা কোথায় তাঁর নিজ নয়নে শ্রীভগবানের অনুপুম রূপামৃত পান করতে পারবেন, আমি তা বলতে পারি।ভারতবর্ষে উড্রদেশ (উড়িষ্রা) নামক একটি প্রদেশ আছে। এই প্রদেশে, দক্ষিণ সমুদ্রের তীরে বিরাজিত রয়েছে শ্রীপুরুষোত্তম ক্ষেত্র। ঐ ক্ষেত্রের একাংশে চতুর্দিকে ঘন অরণ্যানী পরিবেষিটত এক মহিমময় পর্বত নীলগিরি বিদ্যমান। ঐ পর্বতের শিখরে এক সুবিশাল বটকৃক্ষ বিদ্যমান, যা কল্পবট নামে আখ্যাত। এই মহীরুহের পশ্চিমভাগে রোহিণীকুণ্ড নামে একটি সুন্দর পুষ্করিণীতে রয়েছে দিব্যস্নানের জন্য অমৃতবারি। ভগবানের কৃপা বারি-রূপে ঐ পুষ্করিণীকে পূর্ণ করেছে এই জল মোক্ষপ্রদ; যেকোন ব্যক্তি ঐ রোহিণীকুণ্ডের দিব্য জল স্পর্শ করলে তৎক্ষণাৎ তিনি মুক্তি লাভ করেন।”

তীর্থযাত্রী নীলগিরি পর্বতের মহিমা বর্ণনা করে চললেন। “ঐ কুণ্ডের পূর্বতটে পরমপুরুষ শ্রীবাসুদেবের এক বিগ্রহরূপ  বিরাজিত । অতিরম্য-দর্শন এই শ্রীবিগ্রহ জ্যোতির্ময় ইন্দ্রনীলমণি-নির্মিত। যে ব্যক্তি রোহিণীকুণ্ডের দিব্যবারিতে অবগাহন করার পর কুণ্ডতটে বিরাজিত এই  শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করেন, তিনি জড়বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করে।

“এই বিগ্রহের পশ্চিমভাগে বিরাজিত রয়ে্েযছ ‘সবর দীপক’ নামক আশ্রম। সেখানে একটি পথ চলে গিয়েছে শ্রীবিষ্ণুর একটি মন্দিরের দিকে। সেই মন্দিরে শঙ্খ ও চক্রধারী শ্রীজগন্নাথদেব বিরাজিত।” ভগবান  ও তাঁর আবাসস্থানের বর্ণনা করার সময় তীর্থযাত্রীটির নয়নদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তাঁর শরীরে দিব্য ভাবো˜্গমের লক্ষণাদি প্রকটিত হতে থাকে। তিনি বর্ণনা করতে থাকেন, “শ্রীজগন্নাথদেব কৃপাম্বুধি, কৃপার সাগর। তিনি কেবল তাঁর দর্শন দানের মাধ্যমে প্রত্যেক জীবকে উদ্ধার করে থাকেন। ভগবান শ্রীজগন্নাথের প্রীতি সম্পাদনের জন্য আমি পুরো এক বৎসর নীলাচল ধামে অতিবাহিত করেছিলাম। পরমকৃপাময় প্রভু আমার মতো একজন মহামূর্খকেও তাঁর সেবা সম্পাদনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাঁর কৃপাবলে আমি অষ্টাদশ বিদ্যার সবগুলিতে সুপারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম এবং আমার বুদ্ধি নির্মল হয়ে ওঠে। দিব্য-বিদ্যা ও জ্ঞান লাভের পরম ফল-স্বরূপ আমি প্রভুর প্রতি শুদ্ধ ভক্তি লাভ করি। আমি এখন ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে ব্যতীত অন্য কিছুই দর্শন করি না।”

মহারাজার সামনে নিপতিত হয়ে তীর্থযাত্রীটি তাকে শ্রীজগন্নাথদেবকে নীলাচলে তাঁর নিবাসস্থানে দর্শন করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান। “হে মহারাজ, আপনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর একজন মহান ভক্ত। আপনি নিরন্তর প্রীতি ও ভক্তি সহকারে তাাঁর সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই কারণে আমি আপনার নিকট এসেছি কোন ধনসম্পদের প্রার্থী হয়ে নয়, কেবল সেখানে গিয়ে লক্ষ্মীপতি শ্রীজগন্নাথের আরাধনা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাতে, যিনি পুরুষোত্তম ধামে বিরাজ করছেন।”

এই কথা বলে তীর্থযাত্রী অন্তর্হিত হলেন। এমন একটি দিব্যস্থান এই বসুধায যে রয়েছে, সেই সংবাদ শ্রবণ করে মহারাজ ইন্দ্রদু্্যম্ন বিস্মিত হলেন। তিনি যা শ্রবণ করেছেন, তার দ্বারা প্রণোধিত হয়ে তিনি বললেন, “আমরা মহাসম্ভ্রম-সহকারে একজন সাধুর শ্রীমুখে রহস্যময় বিবরণ শ্রবণ করলাম। পরমপুরুষের অনুগ্রহে আমি ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রাপ্ত হয়েছি। এখন চতুর্থ পুরুষার্থ লাভ করার জন্য আমাকে সহায়তা করুন।”

পুরোহিত মৃদুস্বরে বললেন, “হ্যা, পরুষোত্তম ক্ষেত্রে গমন করে সেখানে বাস করার অভিপ্রায়টি শুভপ্রদ।” তিনি চিন্তান্বিতভাবে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর বললেন, “আমি প্রথমে আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিদ্যাপতিকে নীলাচলে প্রেরণ করি। সে সেখানে আপনার এবং আপনার সহগামী অনুচর পারিষদবর্গের জন্য একটি শিবির স্থাপনের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে পারবে। নীলাচল ধাম থেকে তাঁকে সংবাদ নিয়ে প্রত্যাগমনের অনুমতি দিন।” রাজা পুরোহিতের প্রস্তাবে সম্মত হলেন।

(স্কন্দপুরাণের বর্ণনা অনুসারে)

No comments:

Post a Comment