শ্রীকৃষ্ণ মুক্তি দান করেন। তাই তাঁর আরেক নাম মুকুন্দ। কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেব শুধু মুক্তিই দান করেন না, তিনি প্রেমও দান করেন। তিনি তখন তিন-বছরের বালক। একদিন কয়েকটি কুকুর ছানাকে তাঁর বাড়ির পাশে খেলা করতে দেখলেন। তাঁকে আসতে দেখে কুকুরছানাগুলো দৌড়ে পালাল, কিন্তু একটি থেকে গেল। তাই তিনি ভাবলেন, “আমি এটিকে পুষব।’ কুকুরটির গলায় দড়ি বেঁধে ঘরে নিয়ে এলেন এবং জড়িয়ে ধরে আদর করলেন।
কিন্তু শচীমাতা তা দেখে বললেন, “এসব কী করছ? তুমি ব্রাহ্মণের ছেলে,
তোমার ঘরে কুকুর রাখা ঠিক নয়।” নিমাই উত্তর দিলেন, “না, না, এ তো আমার পোষা কুকুর।” শচীমাতা বুঝিয়ে বললেন, “ওকে তুমি বাইরে রাখো। কুকুরকে ঘরের ভিতরে নিয়ে আসা উচিত নয়।”
বৈদিক প্রথা অনুযায়ী কুকুর হচ্ছে অশুদ্ধ, তাই এদেরকে বাইরে রাখা হয়। কারণ, ঘরে থাকলে ভগবানের জন্য তৈরি নৈবেদ্যের দিকে চোখ দিতে পারে। তখন শ্রীচৈতন্যদেব বললেন যে, তিনি তাঁর বন্ধদের সঙ্গে স্নান করতে যাবেন। তাই শচীমাতা তাঁকে বললেন, “ঠিক আছে, তুমি গিয়ে স্নান কর। আমি তোমার কুকুরছানাকে দেখে রাখব। কেউ কিছু করবে না।
শ্রীচৈতন্যদেব গঙ্গায় স্নান করতে গেলেন। ইতিমধ্যে কুকুরছানাটির মা তার বাচ্চা খুঁজতে বাড়ি এল। শচীমাতা তখন স্বস্তি পেলেন; তিনি কুকুরটিকে রাখতে চাচ্ছিলেন না।
গৌরসুন্দর ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল, “আমার কুকুরছানা কোথায়?” শচীমাতা বললেন, “তোমার বন্ধুরা হয়ত ওকে ছেড়ে দিয়েছে।” ইতিমধ্যে নগরীর আরেক পাশে সেই কুকুর ছানাটি লাফাতে লাগল আর বলতে লাগল,“হরিবোল! হরিবোল!” ততক্ষণে তাকে ঘিরে লোকজনের ভিড় জমে গেল। কুকুরছানাটি ভূমিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। সে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমে বিহ্বল হয়ে বলতে লাগল, “হরিবোল! হরিবোল।”
ভূমিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে কুকুরছানাটি দেহত্যাগ করল। তার হৃদয় থেকে একটি স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে এল। তখন আকাশ থেকে একটি দিব্য জ্যোতি নেমে এল, যা ছিল ভগবান বিষ্ণুর একটি দিব্য বিমান। তখন কুকুরটির আত্মা একটি মানবরূপ ধারণ করলে বিষ্ণুদূতেরা তাকে সেই দিব্য বিমানে করে চিন্ময় জগতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।
এভাবে এমনকি শিশু অবস্থাতেও শ্রীচৈতন্যদেব প্রেম বিতরণ করছিলেন। শুধু তাঁর আলিঙ্গন লাভ করেই কুকুর কৃষ্ণ প্রেম প্রাপ্ত হয়েছিল। এমনকি কেউ যদি শুধু চৈতন্যদেবের চরণপদ্ম স্পর্শ করতেন, তাহলেও তিনি ভগবৎ প্রেম লাভ করতেন।
No comments:
Post a Comment