জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Sunday, 3 April 2016

জগন্নাথ মিশ্রের স্বপ্ন

জগন্নাথ মিশ্র মাঝে মাঝে দুষ্ট নিমাইকে শাসন করতে চাইতেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, এক ব্রাহ্মণ আবির্ভূত হয়ে তাঁকে বলছেন, “আপনি আপনার ছেলেকে কীভাবে শাস্তি দেবেন? তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ। স্বয়ং ঈশ্বর। তিনি নারায়ণ। আপনি কিভাবে তাঁকে শাসন করবেন?”
তখন তিনি ভাবতে লাগলেন, “আপনি কী বলতে চান? নিমাই আমার ছেলে, আর আমি ওর পিতা। সে সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না তা দেখা আমার দায়িত্ব। তাকে আমার শিক্ষা দেওয়া উচিত এবং শাসন করা উচিত।” ব্রাহ্মণ আবার বললেন, “আপনার পুত্র স্বয়ং ঈশ্বর। তিনি পুরুষোত্তম। তিনি কৃষ্ণ। আপনি ঈশ্বরকে কী শিক্ষা দেবেন?”
জগন্নাথ মিশ্র উত্তর দিলেন, “পিতা পিতা-ই, পুত্র পুত্র-ই, সে কে তা দেখার বিষয়


 নয়। জগন্নাথ মিশ্র সত্যিই বাৎসল্য রসে যুক্ত ছিলেন। শেষবারের মতো ব্রাহ্মণ চিৎকার করে বললেন, “দেখুন আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনার পুত্র স্বয়ং ভগবান।” এক মুহূর্তের জন্য জগন্নাথ মিশ্রের মনে হলো, “সত্যিই তো আমার পুত্র ভগবান, আমি ভগবানকে কী শিক্ষা দেব?” তখন তাঁর স্বপ্ন ভঙ্গ হলো এবং তিনি জেগে উঠে ভাবতে লাগলেন, “এ কী দুঃস্বপ্ন! নিমাই তো আমার পুত্র।” তিনি বাৎসল্যভাবে ফিরে গেলেন। যোগমায়া এমনভাবে ভক্তকে আচ্ছাদিত করেন যে, ভক্তরা ভগবানকে পেয়েও বুঝতে পারেন না।
শ্রীকৃষ্ণের সেবা করে আমরা অপ্রাকৃত আনন্দ অনুভব করি। তা হতে পারে মন্দির মার্জন, গ্রন্থ বিতরণ, শ্রীবিগ্রহ অর্চন, গো পালন, ফুলের পরিচর্যা বা আমাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কৃষ্ণের প্রতি যেকোনো প্রীতিপূর্ণ সেবা আমাদের আনন্দ দান করে।
সিদ্ধাবস্থায় আমরা কৃষ্ণের লীলায় প্রবেশ করি। তখন ভগবানের সঙ্গে সম্পর্কিত হই- পিতা, মাতা, সখা, ভৃত্য, প্রণয়ী বা স্ত্রী। আমরা সেই নির্দিষ্ট সম্পর্কে অবস্থান করেই আনন্দ লাভ করি। জগন্নাথ মিশ্র আদৌ জপ করেন কি না তা দেখার বিষয় নয়, তিনি কোনো সাধক নন। তিনি ইতোমধ্যেই শুদ্ধ সত্ত্বে অধিষ্ঠিত। তিনি বিষ্ণু পূজা এবং সবকিছুই করতে পারেন, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণরূপে নিমাইয়ের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তিনি সরাসরি কৃষ্ণের সেবা করছেন।
এটিই শুদ্ধ ভক্তদের সাথে আমাদের পার্থক্য। আমরা সমস্ত নিত্যসিদ্ধ ভক্তদের অনুকরণ করতে পারি না। নির্দিষ্ট সংখ্যক মালা জপ করা আমাদের প্রয়োজন এবং ভক্তিমূলক সেবা  অনুশীলন করা প্রয়োজন। ভক্তিযুক্ত সেবার মাধ্যমেই আমরা সেই অমৃতের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি। এর মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে আমরা শুদ্ধ হতে পারি এবং কৃষ্ণের করুণায় আমারও নিত্য লীলায় যুক্ত হতে পারি। তখন আমরা ভগবানকে নির্দিষ্ট সম্পর্ক অনুসারে সেবা করতে পারব।
এভাবে শৈশব লীলায় পিতা-মাতা বা সেই পর্যায়ের ভক্তবৃন্দ সেবা করার অনেক সুযোগ পান এবং ভগবান যখন বেড়ে ওঠেন, তখন বন্ধুরা অনেক সুযোগ লাভ করেন। এভাবে বিভিন্ন লীলায় বিভিন্ন সম্পর্কের ভক্তরা অধিক সুযোগ পান।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা এতই অমৃতময় যে, শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেন, শুধু এই লীলা স্মরণের মাধ্যমেই কেউ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতি ভক্তি লাভ করতে পারে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বাল্যবস্থায় তাঁর পিতা-মাতার সঙ্গে অনেক প্রেমপূর্ণ লীলাবিলাস করেন। জগন্নাথ মিশ্র ছিলেন বাৎসল্য রসের ভক্ত। তিনি তাঁর পুত্রকে ভগবান মনে করতেন না। যেকোনো পিতা তাঁর পুত্রকে যেভাবে দেখেন, তিনিও তাঁর পুত্রকে সেভাবেই দেখতেন।

No comments:

Post a Comment