কোন গাঁয়ে অমর নামে এক ছেলে ছিল। তার পিঠে একটি ফোঁড়া হওয়াতে সে নিদারুণ যাতনায় ছটফট করতে লাগল। এমন কি, সে সহজে মরবার জন্য বিষ খাওয়ার কথা চিন্তা করতে লাগল। ছেলেটির এই দশা দেখে তার মা, মাসি, পিসি, ঠাকুমা একটি তালপাতার পাখা নিয়ে ফোঁড়ার ওপর বাতাস করতে লাগল, কখনও বা ফুঁ দিতে লাগল। এইভাবে তারা তার ব্যথা উপশম করবার চেষ্টা করল।
প্রতিবেশী একজন লোক এস বলল, ফোঁড়ার ব্যাথা ভুলাতে হলে অজ্ঞান করে রাখা উচিত। আর একজন এস বলল, ‘অজ্ঞান করে রেখে কিছু লাভ নেই, প্রাণ
আছে বলেই এত যন্ত্রণা। সুতরাং আর দেরী না করে এই মুহূর্তেই প্রাণ-নাশ করাই শ্রেয়। রোগের শান্তি, রোগীরও শান্তি।
আছে বলেই এত যন্ত্রণা। সুতরাং আর দেরী না করে এই মুহূর্তেই প্রাণ-নাশ করাই শ্রেয়। রোগের শান্তি, রোগীরও শান্তি।
ছেলেটির বাবা কারো কথায় কান না দিয়ে একজন ভাল ডাক্তারকে ডেকে আনলেন। ডাক্তার ধারালো ছুরি কাঁচি বের করলেন তাঁর বাক্স থেকে এবং তার বাবাকে বললেন ছেলেটিকে ভাল করে চেপে ধরতে, যাতে সে নড়াচড়া না করে, অপারেশনের কথা শুনেই মা-মাসি-পিসি-দিদিমা সবাই ভয়ে কাঁদতে শুরু করল।
তখন ছেলেটি বাজে ভাষায় ডাক্তারকে বকতে শুরু করে দিল- ‘তুমি আমাকে খুন করতে এসেছ। যাও, তোমার বাড়ি চলে যাও। নতুবা পুলিশে ধরিয়ে দেব। আগে নিজের পেটে বসাও না কেন? যাও, গিয়ে তোমার ছেলের পিঠে ছুরি বসাও। আমি বিষ খেয়ে মরব, তবুও তোমার হাতে মরব না।’
চিকিৎসক ছেলেটির এত সব কথায় কান না দিয়েই তাকে চেপে ধরে ছুড়ি চালিয়ে ফোঁড়ার পুঁজরক্ত বের করে দিলেন। তারপর ঔষধ দিয়ে বেঁধে দিলেন। কিছুক্ষণ পরেই ছেলের সব যাতনা ঘুচে গেল। আর কয়েকদিনের মধ্যেই একেবারে সুস্থ হয়ে উঠল।
।। হিতোপদেশ।।
কেউ কেউ গল্পের মা-মাসিদের মতো জীবনের শান্তি কামনায় প্রেয় ও ভোগের পক্ষ সমর্থন করেন। সাময়িকভাবে অজ্ঞান করে রাখার বা প্রাণনাশ করবার পক্ষপাতী ব্যক্তিরা নির্বিশেষবাদ সমর্থন করেন। প্রকৃতপক্ষে কোনটিতেই জীবের নিত্য মঙ্গল লাভ হয় না। সদগুরু বা সাধুগণের সদুপদেশ দ্বারা বদ্ধজীবের মিথ্যা মায়ামোহ এবং অসৎ বিষয়ে আসক্তি ছিন্ন হলে জীবের স্বরূপ উপলদ্ধি হয়। তখন সে ভগবৎ সেবায় যুক্ত হয়। এই হল পরম শান্তি লাভের একমাত্র উপায়।
No comments:
Post a Comment