জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Friday, 18 March 2016

বিস্ময়কর অতিথি

শ্রীচৈতন্যমঙ্গলে বর্ণিত আছে, একবার শিশু অবস্থায় নিমাই জগন্নাথ মিশ্রের অঙ্গণে হামাগুড়ি দিচ্ছিলেন। তখন জগন্নাথ মিশ্র মূল ঘরের পাশে ঘুমাচ্ছিলেন। শচীমাতা শ্রীচৈতন্যদেবকে কোলো নিয়ে বারান্দায় এলেন। ঠিক তখনই উচ্চতর গ্রহলোক থেকে এসে দেবতারা শচীমাতার অঙ্গনে সমবেত হলেন। তাঁদের মধ্যে কারো বিশেষ বর্ম, কারো দুটো মাথা এবং সকলেই অপরূপ সাজে সজ্জিত ছিলেন। সাথে অনেক ব্রাহ্মণও এসেছিলেন। শচীমাতা তাঁর স্বামীকে ডাকতে চাইলেন। শব্দ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু একটুও নড়তে পারলেন না। তখন চিৎকার 

 করার জন্য মুখ খুললেন, কিন্তু তা হলো নিঃশব্দ আর্তনাদ। তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন।
তারপর তাঁরা শিশু চৈতন্যদেবকে শচীমাতার কোল থেকে নিয়ে একটি বিশেষ স্বর্ণ বেদীতে বসালেন। এর উপর একটি স্বর্ণে
সিংহাসনে রাখা রত্নখচিত স্নান পাত্রের উপর তাঁরা নিমাইকে বসালেন। তারপর উচ্চতর গ্রহলোকের অধিবাসীরা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে নিমাইকে দুগ্ধ ও দধি দিয়ে স্নান করাতে লাগলেন। চমৎকার একটি অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে, ভগবান অত্যন্ত প্রীত হয়েছিলেন।
গৌরপূর্ণিমার সময় আমরা যখন অভিষেক করি, তখন শ্রীচৈতন্যদেব পরিপূর্ণ যুবক বিগ্রহকে অভিষেক করাই! কিন্তু তারা অভিষেক করেছিলেন ছোট্ট শিশু অবস্থায়, যখন তিনি সবেমাত্র এক পা, দুই পা হাঁটতে শিখেছেন। শচীমাতা তা দেখে বিস্ময়াভিভূত হলেন। দেবতারা শ্রীচৈতন্যদেবকে স্নান  শেষে গা মুছে দিয়ে বারান্দায় নামিয়ে দিলেন। যখন তিনি হাঁটছিলেন, তখন প্রতি পদক্ষেপে নূপুরের ধ্বনি হচ্ছিল। তারপর তিনি দেবতাদের দিকে ফিরে তাঁদের হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করে নৃত্য করতে বললেন। শচীমাতা দেখছিলেন- নিমাইয়ের পায়ে কোনো নূপুর ছিল না, তথাপি সেই মধুর শব্দ আসছিল। তিনি সেখানে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে দেখলেন। শিশু নিমাই ঘরের অন্য পাশে এসে দেবতাদের বললেন, “তোমরা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর!” তখন সকলে মিলে এক মহাসংকীর্তন আরম্ভ করলেন। নৃত্য করতে লাগলেন সেই সাথে ভগবানও তাঁদের সঙ্গে নৃত্য করে গাইতে লাগলেন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
সেই মহাসংকীর্তনে দেবতারা সকলে নৃত্য করেছিলেন এবং শচীমাতা দেখলেন, ছোট্ট নিমাই, যে এখনো পুরোপুরি হাঁটতে শেখেনি, সে হঠাৎ করেই উর্ধ্ববাহু হয়ে চরণ দুলিয়ে নৃত্য শুরু করেছে। কীতর্ন আরো আনন্দঘন হয়ে উঠল। শচীমাতা তা দেখে এতটাই অভিভূত হলেন যে, তিনি প্রায় মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি মাটিতে আঘাত করতে লাগলেন। এই অতিজাগতিক জীবদের হরেকৃষ্ণ কীর্তন ও নৃত্য করতে দেখে শচীমাতা এতটাই অবাক হলেন যে, তিনি সংঙ্গা হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন। জগন্নাথ মিশ্র শচীদেবীর পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে বাইরে বেরিয়ে এলেন- “শচী, শচী- সব ঠিক আছে তো?” শচীমাতা জেগে উঠে চারপাশে তাকালেন। ছোট্ট নিমাই তখন রোদের মধ্যে উঠোনে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। শচীদেবী  “পতি! পতি!” বলে কাঁদতে লাগলেন। জগন্নাথ মিশ্র শচীদেবীকে জড়িয়ে ধরলেন, “কী হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেন?” তারপর শচীমাতা ইতোপূর্বে যা দেখেছিলেন সবকিছু বর্ণনা করলেন। কিন্তু তখন তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন সবকিছুই স্বাভাবিক, সেখানে কেউ নেই। মাতার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। তিনি জগন্নাথ মিশ্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কী সত্যই ঘটেছে, নাকি সবই শুধু স্বপ্ন ছিল?”
তাঁরা উঠোনের দিকে তাকিয়ে অভিষেকের কোনো চিহ্নই খুঁজে পেলেন না- সেখানে দুধ, দধি বা জল কিছুই ছিল না। সবকিছু এত শুকনো যে দেখে মনে হচ্ছিল সেখানে কেউই ছিল না, “হয়ত তুমি শুধু একটি স্বপ্নই দেখেছ।” যখন তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করছিলেন তখন নূপুরের মধুর ধ্বনি শুনতে পেলেন। কিন্তু নিমাইয়ের পায়ে কোনো নূপুর ছিল না। দেবতারা আসতে পারেনা আবার চলে যেতেও পারেন। স্বাভাবিকভাবে তারা আমাদের দৃষ্টিগোচর হন না। তাই যদি তারা এসে ভিন্ন মাত্রার কিছু করতে চান, করতে পারেন। প্রতিদিনই নিমাইয়ের বাল্যলীলায় এ ধরনের বহু অদ্ভুত ঘটনা ঘটত।

No comments:

Post a Comment