জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Sunday, 27 March 2016

ব্রাহ্মণ নিবেদিত নৈবেদ্য গ্রহণ (২য় পর্ব)

বিশ্বরূপ দেখলেন তাঁর পিতামাতা কান্নাকাটি করছেন আর বাকি সবাই মুখ গোমরা করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে তোমাদের? সমস্যা কী?” তারপর জানতে পারলেন যে, এই ব্রাহ্মণ তাঁদের অতিথি এবং তাঁরা অতিথি সৎকার ভালোভাবে করতে পারছেন না।
অতিথি সেবার নিয়ম হচ্ছে, তাঁকে স্বয়ং নারায়ণের মতো সেবা করতে হবে। এই নিয়মটি বৈদিক ব্রাহ্মণ পরিবারে খুব কঠোরভাবে পালন করা হতো। তাঁরা সত্যিই অতিথি সেবা করতে চেয়েছিলেন। তাই সবাই খুব বিমর্ষ হয়ে গেলেন। 



আপনারা ভাবতেও পারবেন না, তাঁরা এই বৈষ্ণবের সেবা করার জন্য কত উদ্যোগী ছিলেন। কিন্তু বৈষ্ণব ঠাকুর সিদ্ধান্ত নিলেন, “আচ্ছা, আমি ফলই খাব। কোনো সমস্যা নেই, সব ভুলে যান।”
তখন বিশ্বরূপ এগিয়ে এসে সুমধুর স্বরে বলতে লাগলেন, “হে ব্রাহ্মণ, আপনি জড় বিষয়ে সম্পূর্ণ নির্বিকার। আপনি আপনার জীবনের অধিকাংশ সময় বনে কাটিয়েছেন। কোনো দিন আহার করেছেন, কোনো দিন করেননি। আপনি সর্বদাই উপবাস ও কৃচ্ছ্রসাধনে কঠোর। আহার করা না করা আপনার জন্য কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু আমাদের দেখুন, আমরা গৃহস্থ, অতিথি সেবা আমাদের ধর্ম। তাই আমার পিতা-মাতা আপনার সেবা করতে না পেরে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। আপনি দয়া করে আমার পিতা-মাতা কে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিন এবং আরেকবার নৈবেদ্য প্রস্তুত করার সুযোগ দিন। সেই ভোগ আপনি গভীর রাতে নিবেদন করুন- তখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, আশেপাশে কেউ থাকবে না।”
মধুর স্বভাব বিশ্বরূপের বাক্য ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক এবং দার্শনিক বিচারে সঠিক, তাই অতিথি পরাভূত হলেন। তিনি বললেন, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হোক” শচীমাতা যেন জীবন ফিরে পেলেন। তাঁরাও সারাদিন কিছু খাননি। অতিথি আহার না করলে কীভাবে আহার করতে পারেন? তাঁরা বিরক্ত না হয়ে বরং বিপুল আগ্রহ নিয়ে আবারো রান্না করতে শুরু করলেন। তাঁদের মন খারাপ ছিল একটি কারণে, তাঁরা তাঁদের অতিথিকে এখনো ভোজন করাতে পারেননি। এ ধরনের আতিথ্য আজকাল প্রায়ই দেখাই যায় না।
 আবার তাঁরা সবকিছু নতুন করে প্রস্তুত করে ব্রাহ্মণকে প্রদান করলেন। তিনি দেখলেন নিমাই ঘুমাচ্ছে- অন্য সবাই ততক্ষণে ঘুমাতে গেছে। তাঁরা ব্রাহ্মণকে বললেন, “আপনি ভোগ নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করুন।
আমরা সবাই চলে যাচ্ছি।”
ব্রাহ্মণ পুনরায় ধ্যানে বসলেন, “গোপাল, গোপাল! এসো, নৈবেদ্য গ্রহণ কর।” তখন ছোট্ট নিমাই আবার এসে খেতে শুরু করলেন। ব্রাহ্মণ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব গোপালকৃষ্ণ রূপ ধারণ করে বলতে লাগলেন, “তুমি আমাকে ডাকছ বলে আমি এসে ভোগ গ্রহণ করছি। তুমি তাতে কষ্ট পাচ্ছ কেন?” তখন সেই ব্রাহ্মণ ভিক্ষুক তাঁর প্রভু শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং আসতে দেখে এবং নৈবেদ্য গ্রহণ করতে দেখে অত্যন্ত অভিভূত হলেন। তিনি নিমাইকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করলেন। ছোট্ট নিমাই তাঁকে বোঝালেন, “আমি এখানে আবির্ভূত হয়েছি বটে, কিন্তু নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি। তুমি আমাকে অনবরত ডাকছ বলেই তো আমি এলাম! তুমি আমাকে কেন দোষারোপ করছ?” এভাবে তিনি তাঁর ভক্তকে আশীর্বাদ করলেন, তারপর তিনি শ্রীচৈতন্য রূপে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
সেই ব্রাহ্মণ ভিক্ষুক অত্যন্ত উল্লসিত হলেন। বারবার সদ্য ঘটে যাওয়া অপ্রাকৃত লীলা স্মরণ করতে লাগলেন। তিনি কিছু অন্য নিয়ে নিজের গায়ে ঘষতে লাগলেন আর ভাবতে লাগলেন কীভাবে ভগবান স্বয়ং এসে তাঁর সেবা গ্রহণ করলেন। সেই অন্ন গায়ে ঘষতে ঘষতে উল্লসিত হয়ে তিনি “হরিবোল! হরিবোল!” বলতে লাগলেন। ব্রাহ্মণের চিৎকার শুনে জগন্নাথ মিশ্রসহ সকলেই ছুটে এলেন। ব্রাহ্মণ তাঁর গায়ে অন্ন লেপন করছেন দেখে তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, “কী হলো প্রভু?” কিন্তু ব্রাহ্মণ কিছুই বলতে পারলেন না। কারণ ভগবান কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করেছেন। গায়ে অন্ন আটকে থাকায় তাঁকে বোকা বোকা লাগছিল। কিন্তু যেহেতু এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন না, তাই তা খেতে লাগলেন। তাঁরা ভাবলেন, “শেষ পর্যন্ত কিছু প্রসাদ পাওয়ায় তিনি হয়ত খুব আনন্দিত হয়েছেন।” প্রকৃত ঘটনা তাঁরা কেউই জানতে পারলেন না। এভাবে ছোট্ট নিমাই তাঁর ভক্ত এবং পিতা-মাতার সাথে আনন্দময় লীলাবিলাস করতেন।

No comments:

Post a Comment