শ্রীচৈতন্যমঙ্গলে
বর্ণিত হয়েছে, নারদমুনি আগে থেকেই জানতে পেরেছিলেন যে, কলিযুগ অতি
শ্রীঘ্রই আসছে। তিনি কলিযুেগের সমস্ত সমস্যার সমাধান জানতে দ্বারকায়
শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে যান।
সে সময় শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার প্রাসাদে ছিলেন এবং তিনি রুক্মিণীকে খবর
পাঠিয়েছিলেন যে, পরে তিনি তাঁর প্রাসাদে আসবেন। তাই তিনি তাঁর
পরিচারিকাগণের সাথে প্রাসাদটি সজ্জিত করলেন, পুত্রদের সুন্দরভাবে সাজালেন,
বৈদিক মন্ত্র আবৃত্তি করতে পণ্ডিতদের আনা হলো, জলপূর্ণ ঘট, কলাগাছ ও আখ আনা
হলো- শ্রীকৃষ্ণকে স্বাগত জানানোর জন্য সব কিছুর আয়োজন করা হলো।
তাই যখন কৃষ্ণ এলেন, তখন তাঁকে সত্যিই চমৎকারভাবে অভিবাদন জানানো হলো।
পিতাকে আলিঙ্গন করার জন্য তিনি তাঁর সন্তানদের পাঠালেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণকে
অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন। কৃষ্ণকে একটি বিশেষ আসনে বসালেন এবং পদধৌত করে পূজা
করতে লাগলেন।
ঠিক তখনই রুক্মিণী কাঁদতে শুরু করলেন;শ্রীকৃষ্ণ তা দেখে অবাক হয়ে ভাবছিলেন,
'আমাকে
দেখেও আনন্দিত হয়েও সে কেন ক্রন্দন করছে?' তাই কৃষ্ণ জিজ্ঞেস
করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? আজ তোমার কোন দাসী কি তোমার সাধে দুর্ব্যবহার
করেছে? ছেলেমেয়েরা কি তোমার কথা শুনে নি? তোমার ক্রন্দনের কারণ কি?
রুক্মিণী
কৃষ্ণের দিকে তাকিযে বলতে লাগলেন, তুমি কি সত্যিই জানো না আমি কেন কাঁদছি?
রাধারানী জানেন কেন আমি কাঁদছি। আমি কাঁদছি কারণ তুমি চলে যাবে। যদি তুমি
প্রতিজ্ঞা করো যে, তুমি কখনই দ্বারকা ছেড়ে যাবে না, তাহলে আমি কান্না
থামাবো।
কৃষ্ণ তাঁকে সান্তনা দিলেন, না, আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না, আমি তোমাকে
কাঁদাবো না। এভাবে তিনি তাঁকে শান্ত করার চেষ্ঠা করলেন। তাঁর পাশে বসিয়ে
চোখের জল মুছিয়ে দিলেন।
ইতি মধ্যে নারদমুনি কৃষ্ণের কাছে এলেন। কৃষ্ণ
নারদমুনিকে দেখে গুরুদেব গুরুদেব বলে সম্ভাষণ জানানোর মাধ্যমে
রুক্মিণী দেবীর সঙ্গে সৃষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেলেন।
তারপর শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণী দেবীসহ রনারদমুনির চরণ ধৌত করলেন। তাঁকে একটি
বিশেষ ব্যাসাসনে বসালেন। কৃষ্ণ লক্ষ্য করলেন নারদমুনি উদ্বিগ্ন। কৃষ্ণ অবাক
হলেন, আজ এমন কেন হচ্ছে, এ দিকে রুক্মিণী কান্নাকাটি করছে, সদা
সাচ্ছন্দ্যে বিচরণকারী নারদমুনিও উদ্বিগ্ন। তাই তিনি নারদমুনিকে জিজ্ঞেস
করলেন, আপনি এতো উদ্বিগ্ন কেন?
নারদ উত্তর দিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে আমি বুঝতে পারছি যে ,
কলিযুগের সূচনা হচ্ছে। লোকজন জড় বিষয়ে মোহগ্রস্ত হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের
প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এভাবে কলিযুগের বিভিন্ন কুলক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। এর
মানে আপনার উপস্থিতি ম্নান হয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই আপনি এই পৃথিবী ত্যাগ করবেন
এবং কলিযুগ শুরু হবে। তাই আমি জানতে চাই যে, বদ্ধ জীবদের জন্য আপনার
সিদ্ধান্ত কী? এই কলিযুগে তারা কিভাবে উদ্ধার পাবে? আমি কলিযুগের বদ্ধ
জীবাত্মাদের নিয়ে খুব চিন্তিত।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভাবতে লাগলেন, রুক্মিণী দেবী বলেছিলেন যে, রাধারানী তাঁর
মনোভাব জানেন, আর নারদমুনি কলিযুগের বদ্ধ জীবদের মুক্তির বিষয়ে এতটা
উদ্বিগ্ন। কৃষ্ণ তখন বললেন, আমি কলিযুগে আবার আসবো এবং রাধারানীর ভাবকান্তি
গ্রহণ করব। পরিগ্রহ করবো একটি সুবর্ণ রূপ- গৌরাঙ্গ।
No comments:
Post a Comment