জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
সবাইকে নমস্কার

Saturday, 26 March 2016

চোরদের বিভ্রান্তি

এক সময় নিমাই বাড়ির বাইরে রাস্তায় হাঁটছিল, তখন দু’টি চোর তাঁকে দেখতে পেয়ে একজন আরেকজনকে বলতে লাগল, “দেখ, এই ছেলেটা সবেমাত্র এক-দু পা হাঁটতে শিখেছে। ওর গায়ে কত দামী দামী অলংকার। এই সোনার 


অলংকারগুলোর মূল্য নিশ্চয়ই হাজার হাজার টাকা হবে। সে নিশ্চয়ই ধনী 
ঘরের সন্তান। চল তাঁকে ধরি।” তারা নিমাইকে বলল, “আমরা তোমার কাকা। আমরা তোমাকে মিষ্টান্ন, সন্দেশ, রসগোল্লা খাওয়াতে এসেছি।” নিমাই বলল, “তাই! আমি মিষ্টি খুব পছন্দ করি।” চোরেরা উত্তর দিল, “তাহলে আমাদের সাথে চল। আমরা তোমাকে মিষ্টির দোকানে নিয়ে যাব।”
এভাবে দুই চোর নিমাইকে কাঁধে করে রওয়ানা হলো। ছোট নিমাই চোরের কাঁধে চড়ে খুব মজা পাচ্ছিল আর আশেপাশে তাকাচ্ছিল। চোরেরা ভাবতে লাগল, “টাকা হচ্ছে মধুর মতো মিষ্টি। আমরা অনেক বড়লোক হতে যাচ্ছি। এই বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে গোপনে আমরা ওর সব স্বর্ণালংকার চুরি করব।” তারা সমস্ত নগরী ঘুরে বেড়াল। তখন নবদ্বীপ ছিল খুবই ব্যস্ত নগরী। প্রায় দশ লক্ষ লোক সেখানে বাস করত। তা ছিল পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় আর ব্যস্ত নগরী। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সরে একটি বড় রাস্তায় ঢুকল। নিমাইকে কাঁধে নিয়ে শহরের বিভিন্ন গুপ্তস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর নিমাই সেই ভ্রমণটা খুব উপভোগ করছিল। নিমাই বলল, “ আমার মিষ্টি কোথায়? তোমরা না বলেছিলে আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে।” তারা একটি মিষ্টির দোকান দেখে থামল আর নিমাইকে সন্দেশ, রসগোল্লা, চমচম- বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি কিনে দিল্ নিমাই যখন মিষ্টি খেতে লাগল, তখন তারা বলল, “ এখন আমরা তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাব।” কিন্তু মনে মনে তারা ভাবল যে তারা সেই বাচ্চাকে নিয়ে গোপন আস্তানায় যাবে।
হাঁটতে হাঁটতে দেখল যে, তারা তাদের গোপন আস্তানায় চলে এসেছে আর ভাবছে, “এখানেই আমরা এই বাচ্চার সমস্ত অলংকার চুরি করব।” তাই নিমাইকে কাঁধ থেকে নামাল আর সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। তারা দেখল, আসলে ঠিক নিমাইয়ের বাড়ির সামনেই তারা এসেছে। জগন্নাথ মিশ্র আর শচীমাতা জানতে পেরেছিলেন যে, দু’জন আগন্তুক এসে তাঁদের সন্তানকে নিয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁদের মনের অবস্থা তখন কেমন ছিল? তাঁরা সর্বত্র নিমাইকে খুঁজছিলেন আর আশেপাশের সব জায়গা ছুটে বেড়াচ্ছিলেন।
ছোট্ট নিমাই দৌড়ে তাঁর পিতার কাছে গেলে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে লাগলেন, “ও নিমাই, নিমাই তোমার জন্য কতই না দুশ্চিন্তায় ছিলাম!” জগন্নাথ মিশ্র নিমাইকে আবার কাছে পেয়ে এমন খুশি হলেন যে, তিনি নিমাইকে ফিরিয়ে দেবার জন্য দুই ভদ্রলোককে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। তিনি ভাবলেন, এর অবশ্যই নিমাইকে বাইরে ঘুরতে দেখে এখানে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু চোরেরা খুব ভয় পেল, কেননা তারা ছিল অপরাধী আর তাদের মন ছিল কলুষিত। তারা ভাবতে লাগল, “আমরা ধরা পড়ে যাচ্ছি। রাজার লোকেরা আমাদের ধরে নিয়ে যাবে। তারা আমাদের ঝুলিয়ে রাখবে। বিভিন্ন রকমের শাস্তি দিবে।” তাই তারা প্রাণপণে দৌড়াতে লাগল।
তাদের দৌড়াতে দেখে জগন্নাথ মিশ্র অবাক হয়ে ভাবলেন, “ওদের কি হলো? ওরা এভাবে দৌড়ে পালাচ্ছে কেন?” তিনি জানতেন না যে, তারা গহনা নেবার জন্য নিমাইকে চুরি করেছিল বরং তিনি ভেবেছিলেন যে, ওরা নিশ্চয়ই খুব ভালো লোক, ওরা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
চোর দুটো গিয়ে একটা বাগানে আত্মগোপন করল আর পিছনে ফিরে তাকাতে লাগল কেউ তাদের তাড়া করছে কিনা। কিন্তু তাদের পেছনে কেউ ছিল না। “হে চণ্ডী, হে দেবী, আজ তুমি আমাদের বাঁচালে। আমরা নিশ্চিত শাস্তি থেকে বেঁচে গেলাম।” চোরেরা চণ্ডীর পূজা করে যিনি দুর্গাদেবীর প্রকাশ।
এরপর থেকে জগন্নাথ মিশ্র তাঁর পুত্রের ব্যাপারে আরো সতর্ক হলেন। নিমাই প্রতিদিনই বহু লোকের সাথে এরকম মজা করতেন। একটি শিশুর ভূমিকায় অভিনয় করে আসলে তিনি বিভিন্ন নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করে আনন্দ উপভোগ করতেন। এভাবে শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর আনন্দমুখর শৈশব লীলা সম্পাদন করতেন।

No comments:

Post a Comment