হয়ত আমাদের ভক্তদের অনেকেই শ্রীমন্মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলনে যোগদান করার জন্য উচ্চতন গ্রহলোক থেকে নেমে এসেছেন। হতে পারে তাঁরা সেটা জানেনও না। কিন্তু ভক্ত সংকীর্তন আন্দোলনের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথেই যোগদান করেছেন। এটি একটি প্রমাণ যে, পূর্বজন্মে ভক্তিযোগের সাথে তাঁদের সম্পর্ক ছিল। তাই নারদমুনি বিভিন্ন

গ্রহলোকে গিয়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদরূপে অবতরণের জন্য দেবতাদের আমন্ত্রণ জানান। তারপর শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীরা কাছে যান এবং তাঁরা তাঁকে ব্রহ্মলোকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ব্রহ্মলোক থেকে ব্রহ্মাজী হরিদাস ঠাকুর রূপে আসেন। তারপর নারদ গোলক বৃন্দাবনের শ্বেতদ্বীপে যান, সেখানে তিনি শ্রীচৈতন্যদেবকে দ্বারকার রানীগণ ও বৃন্দাবনের গোপীগণের দ্বারা অভিষিক্ত হতে দেখেন। তিনি প্রণাম নিবেদন করলে শ্রীচৈতন্যদেব নারদমুনিকে চতুর্মুখ ব্রহ্মার ব্রহ্মা- থেকে আসতে দেখে অবাক হলেন।
শ্রীচৈতন্যদেব বললেন যে, তিনি ভারতবর্ষের সর্বত্র প্রচার করবেন এবং তিনি তাঁর সেনাপতি ভক্তকে অন্য সব জায়গায় প্রচার করার জন্য পাঠাবেন। শ্রীল প্রভুপাদ হচ্ছেন সেনাপতি ভক্ত, যিনি বিশ্বের সব মানুষের কাছে প্রচার করেছেন।
শ্রীমতি রাধারানী গদাধর রূপে, নারদ শ্রীবাস রূপে এবং সত্যভামা জগদানন্দ প-িত রূপে আবির্ভূত হন। কতিপয় ভক্ত চিন্ময় জগৎ থেকে অবতরণ করেন। কেউ কেউ অন্যান্য গ্রহলোক থেকে আসেন।
সর্বভৌম ভট্টাচার্য্য ছিলেন বৃহস্পতি এবং বিদ্যাবাচস্পতি ছিলেন পর্বত মুনি। এভাবে বিভিন্ন ভক্ত সমগ্র ব্রহ্মা- থেকে এবং চিন্ময় জগৎ থেকে আবির্ভূত হন।
তারপর শ্রীচৈতন্যদেব বলরামকে আমন্ত্রণ জানাতে বললেন। তাই নারদ মুনি বলরামের অপাকৃত রূপ দর্শন করতে যান। তিনি তাঁকে প্রণতি নিবেদন করে বলেন যে, শ্রীচৈতন্যদেব আসছেন এবং তাঁকেও অবতীর্ণ হতে অনুরোধ করেছেন। তারপর ভগবান বলরাম তাঁর গোপবালদের নিয়ে একচক্রা গ্রামে আবির্ভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই অবতারে বলরাম নিত্যান্দ নামে পরিচিত। যদি আপনি নিত্যান্দ প্রভুর আবির্ভাবস্থলী একচক্রা গ্রামে যান, তাহলে আপনাকে বলতে হবে “নিতাই গৌর”। যদি আপনি ‘গৌর নিতাই’ বলেন তাহলে ধামবাসীরা খুবই অসন্তুষ্ট হবেন। আপনাকে প্রথমে অবশ্যই ‘নিতাই’ বলতে হবে। নিতাইয়ের কৃপায় গৌরের কৃপা লাভ করতে পারবেন। এভাবেই নারদমুনি ব্রহ্মা-ের সর্বত্র গিয়ে ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব এর লীলায় সঙ্গী হতে বললেন।
শ্রীচৈতন্যদেব অবাধে কৃষ্ণপ্রেম বিতরণ করতে এসেছেন। সাধারনত চিন্ময় জগতে যাওয়ার জন্য বহু বহু জন্মের প্রয়োজন হয়, কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেব এর কৃপায় যে কেউ এক জন্মেই ফিরে যেতে পারে। কলিযুগের মানুষ অধিক অধার্মিক হওয়ার, শ্রীচৈতন্যদেব একটি সহজ পন্থা দিয়েছেন। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করা, নৃত্য করা, প্রসাদ সেবন করা এবং বিগ্রহ দর্শন ও কিছু পরিমাণে লীলা স্মরণ করা। আমাদের কৃষ্ণপ্রেম পনরুজ্জীবিত করার পন্থা প্রদর্শনের জন্য তিনি নিজে কৃষ্ণ হয়েও একজন কৃষ্ণ ভক্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও সমদর্শী। তিনি আমাদের ভাব অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে ভাবের বিনিময় করেন। মাঝে মাঝে দুর্ভাগ্যবশত আমরা এতটা আত্মসমর্পিত নাও হতে পারি। আর তাই কৃষ্ণের সাথে বিনিময়ের সম্পূর্ণ যোগ্যতা আমাদের নাও হতে পারে। তাই কয়েকজন মহান ভক্ত চাইতেন যে, কৃষ্ণ এতটা সমদর্শী না হন, বরং আরেকটু পক্ষপাতী হন।
অর্থাৎ আমাদের চেষ্টার আগেই, কৃষ্ণ যেন সেই কৃপা দান করেন।
ঈরম পুরুষোত্তম ভগবানরূপে কৃষ্ণের পক্ষপাতশূন্য হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, শ্রীচৈতন্যদেব সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভক্ত শ্রীমতি রাধারানীর ভাবকান্তি গ্রহণ করেছেন। আর যেহেতু একজন ভক্ত সর্বদাই কৃষ্ণের গুণকীর্তন করেন এবং সর্বদাই পতিত জীবাত্মাদেও কৃষ্ণসেবা এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেন, তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে ভগবান সমস্ত পতিত জীবাত্মাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কৃষ্ণের চেয়েও অধিক কৃপালু। তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ, কিন্তু কৃষ্ণের চেয়ে আরো বেশি কৃপাময়।
[ ‘গৌরাঙ্গ’- শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ]
No comments:
Post a Comment