ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব লীলা খুবই অসাধারণ। তখন নবদ্বীপের অবস্থা ছিল একটু অন্যরকম। আমরা জানি যে, ভারতবর্ষ হচ্ছে ধর্মক্ষেত্র। কিন্তু আমরা শ্রীমদ্ভাগবত থেকে এটাও জানতে পারি যে, সেখানে বিভিন্ন রকমের ধর্ম ছিল। সনাতন ধর্ম বা ভাবগবত ধর্মেও পাশাপাশি বিভিন্ন অধর্মও ছিল। এখন সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান উপধর্মও দেখা যায়, যা ধর্মেও মতো মনে হলেও বস্তুতপক্ষে ছলধর্ম বা কপটধর্ম। কিছু কিছু লোক হঠযোগের অনুশীলন করে থাকে, কেউ কেউ একে ধর্ম বলেও দাবি করে, কিন্তু তারা শুধু সুস্বাস্থ্যেও জন্য এটি করছে কেউ ধর্মীয় কারণে যোগ অনুশীলন করে না, যদিও সেটা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নির্দেশিত। এরকম আরো বিভিন্ন রকম চর্চা আছে, যা প্রকৃতপক্ষে সঠিক ধর্ম নয়।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ঠিক পূর্বে লোকজন অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্মের জন্য পাগল ছিল। যেগুলো প্রকৃতপক্ষে শুধু
জড়জাগতিক- আধ্যাত্মিক নয়। লোকজন কৃষ্ণ ও বিষ্ণর চেয়ে দেব-দেবীর পূজার প্রতি অধিক আকৃষ্ট ছিল।
লোকজন তাদের মেয়েদের বড় অনুষ্ঠান কওে বিয়ে দিত আর একে খুব বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে গণ্য করা হতো। অবশ্যই বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, কিন্তু আধ্যাত্মিক জীবনের বড় বিষয় নয়। লোকজন তাদের প্রাচুর্য দেখানোর জন্য অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে মেয়েদের বিয়ে দিত। তারা দেখাতে চাইতো যে, তাদের পরিবার খুব অভিজাত, সম্মানীয় ও ধর্মপ্রাণ।
প্রত্যেকেই চাইত, তাকে সবাই ধার্মিক বলে মনে করুক্ ধর্ম ছিল শুধু নাম ও যশের জন্য। তারপর কেউ যদি প্রতিযোগীতায় হেরে যেত কিংবা যদি অন্য কোন ব্যক্তি আরো বড় বিয়ের অনুষ্ঠার করত এবং প্রথম ব্যক্তির আর কোন মেয়ে না থাকত- তাহলে সে শিব ও পার্বতীমূর্তির বিয়ে দিত।
অন্যরা বলত, ‘‘তুমি আমাকে পরাজিত করেছ, এখন আমি আরো বড় কিছু করব। তুমি শিব ও পার্বতীর বিয়ে দিচ্ছ, আমি নতুন কিছু করব, যা আগে কেউ কখনো করেনি- আমি একটি কুকুর ও কুকুরীর বিয়ে দেব।” তারপর আরেকজন বিড়ালের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আর এভাবেই এটি চলতে থাকল।
বৈষ্ণবেরা বলতে লাগলেন, “এ কী? ধর্ম বা আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে এসবের কী সম্পর্ক আছে?” লোকজন শুধু জাগতিক লাভের জন্য বড় বড় পূজার আয়োজন করছিল। কদাচিৎ কেউ বিষ্ণুর পূজা করত, কেউ ভগবানের দিব্য নামকীর্তন করত না। তারা মনে করত, কীর্তন করলে দিব্য নামের শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। একমাত্র গঙ্গাস্নাননের সময়ই তারা কীর্তন করত। কারণ গঙ্গা হচ্ছেন বিশুদ্ধ এবং অন্য কোনো অবিশুদ্ধ জায়গায় কীর্তন করা উচিত নয় । বিভিন্নভাবে নবদ্বীপে জড় জাগতিক আবহাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যদিও বাহ্যিকভাবে এটিকে খুবই ধর্মানুকূল মনে হতো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগই ছিল নামে মাত্র ধর্ম। তারা পোষা বিড়ার বা কুকুরের জন্য অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করত। বিষ্ণুর প্রীতিবিধানের কোনো চেষ্টা ছিল না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষ্ণুর প্রীতিবিধানের জন্যই যজ্ঞ করা উচিত।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের পূর্বে অদ্বৈত গোসাই আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মহাবিষ্ণু ও সদাশিবের যুগ্ম অবতার। তিনি ভাবছিলেন যে, এই কলিযুগে মানুষকে ভগবৎ প্রেম দান করা খুব কঠিন হবে। বিষ্ণু হিসেবে তিনি দৈত্যদের সংহার করতে এবং মোক্ষ দান করতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু প্রেম দান করে মানুষকে পুরোপুরি পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, স্বয়ং কৃষ্ণকেই আসতে বলবেন, কারণ একমাত্র তিনিই প্রেম দান করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment