বৃন্দাবন লীলায় ব্রহ্মা কৃষ্ণের গোবৎস এবং গোপবালকদের চুরি করার পর, কৃষ্ণ নিজেকে গোবৎস ও গোপবালকরূপে বিস্তার করেন। কৃষ্ণ যেকোন কাজ করতে পারেন। তিনি স্বতন্ত্র এবং তিনি সবকিছু এমনভাবে করেন যাতে কেউ বুঝতেই পারবে না যে, তিনি তা করছেন। তাঁর জন্য এটি খুবই স্বাভাবিক।
কৃষ্ণ গোবৎসগুলো খুঁজছিলেন। যখন ব্রহ্মা দেখলেন কৃষ্ণ গোপবালকদের কাছ থেকে দূরে আছেন, তখন তিনি কৃষ্ণের ক্ষমতা দেখার জন্য গোপবালকদের হরণ করেন। কৃষ্ণ ফিরে এসে গোপবালকদেরও খুঁজতে লাগলেন। মাঝে মাঝে কৃষ্ণ
তাঁর লীলায় এতটাই প্রবেশ করেন যে, তিনি সম্পূর্ণরূপে মগ্ন হয়ে যান। কিন্তু তিনি হচ্ছেন সর্বদ্রষ্টা। তাই তিনি বুঝতে পারলেন যে, ব্রহ্মা বালকদের নিয়ে গেছেন। তখন তিনি ভাবলেন, “আচ্ছা, ব্রহ্মা চালাকি করছে। ঠিক আছে।” কৃষ্ণ নিজ দেহ থেকে সেসব গোপবালক ও গোবৎস সবাইকে প্রকাশ করলেন। অবশ্য ব্রহ্মা ইতিমধ্যে তার ধামে চলে গিয়েছিলেন কিন্তু এরপর তিনি চিন্তিত হয়ে ফিরে এলেন। এর মধ্যে এক বছর কেটে গেল।
ব্রহ্মা, গোবৎস ও গোপবালকদের মায়েদের আনন্দ দানের জন্য এসব লীলার আয়োজন। তাঁরা সবাই কৃষ্ণকে খুব ভালোবাসতেন। বৃন্দাবনের প্রত্যেকেই তাঁদের সন্তানদের ভালোবাসতেন বটে। কিন্তু তাঁরা কৃষ্ণকে আরো বেশি ভালোবাসতেন। তাঁরা কৃষ্ণকে ছাড়া থাকতে পারতেন না। কৃষ্ণ ছিলেন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। নন্দ মহারাজ ও যশোদা মাতার সরাসরি কৃষ্ণের পিতা মাতা হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু কৃষ্ণ এক বছরের জন্য বৃন্দাবনের প্রত্যেককে তাঁর পিতা মাতা হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা কৃষ্ণকে যদিও নিজের সন্তানরূপে দেখছিলেন, কিন্তু কৃষ্ণের প্রতি পূর্বে তাঁদের যে ¯েœহ ছিল তা তাঁরা সরাসরি সন্তানের প্রতি প্রদর্শন করতে পারলেন। এমনকি গাভীগুলো পর্যন্ত সরাসরি কৃষ্ণকে দুগ্ধ পান করাতে পেরেছিল এবং নিজ সন্তানের (বাছুরের) মতো কৃষ্ণকে অবলেহন করতে পেরেছিল। এই একটি লীলায় বহু আনন্দদায়ক ঘটনা ঘটেছিল এবং তা ব্রহ্মাকেও আনন্দ দিয়েছিল। ব্রহ্মা ফিরে এলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেলেন। তিনি কৃষ্ণের সাথে তাঁর পার্থক্য বুঝতে পারলেন, যা তাঁকে ভক্তিমূলক সেবা প্রাপ্তিতে সাহায্য করেছে।
কৃষ্ণ লক্ষ লক্ষ ব্রহ্মা- সৃষ্টি করেন, তাই তাঁর পক্ষে কয়েকজন গোপবালক ও গোবৎস প্রকাশ করা এমনকি কঠিন কাজ? তাঁর জন্য কঠিন কিছু নেই। কৃষ্ণ পরম পুরুষোত্তম ভগবান- তিনি যদি নিজেকে বহুরূপে বিস্তার করতে চান তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কোন কিছুই তাঁর নাগালের বাইরে নয়।
যখন ব্রহ্মা বিনীত হলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, কৃষ্ণের শক্তির তুলনায় তাঁর শক্তি অতি নগন্য- তিনি নবদ্বীপ ধামের কেন্দ্রস্থলে ধ্যানমগ্ন হলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল যে, তিনি যেন ভগবানের সেই রূপের ধ্যান করেন, যিনি কলিযুগে আবির্ভূত হবেন, তাই ব্রহ্মা জপ করতে লাগলেন, “গৌরাঙ্গ, গৌরাঙ্গ, গৌরাঙ্গ”। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু পাঁচশত বছর আগে অবতরণ করলেও নবদ্বীপ ধামে তিনি নিত্য বিরাজমান। তিনি সেখানে পাঁচ হাজার বছর আগেও ছিলেন, পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগেও ছিলেন, এমনকি আজও আছেন। যদি আপনার সৌভাগ্য থাকে, তবে আজও তাঁকে আপনি দেখতে পাবেন।
[‘গৌরাঙ্গ - শ্রীল জয় পতাকা স্বামী মহারাজ]
No comments:
Post a Comment